ইসলামী আইনে আকীকার বিধান

ইসলামী আইনে আকীকার বিধান

আকীকা শব্দটি আরবি। এটি উন্নত মানের লাল পাথরের টুকরা অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই পাথর লাল না হয়ে কখনও  কখনও স্বচ্ছ ও সাদা কিংবা হলুদ রংয়েরও হতে পারে।

আকীকা শব্দটি আবার মানব কিংবা চতুষ্পদ জন্তুর বাচ্চার মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় গজানো লোম অর্থে ব্যবহৃত হয়।

আবার আকীকা মানে জবেহকৃত ঐ প্রাণী যা সন্তান জন্মের পর তার মাথার চুল কামানোর দিন জবেহ করা হয়।

বলা হয়, আক্কা ফুলানুন ইয়ায়িক্কু বা ইয়াউক্কু : সে তার সন্তানের চুল কামালো। ওয়া আক্কা ফুলানুন আন মাওলিদিহি ইয়াইক্কু বা  ইয়াউক্কু : সন্তানের পক্ষ থেকে জবেহ করল। 

ইসলামের পরিভাষায়

নিয়তের সাথে  নির্দ্দিষ্ট কিছু শর্তসাপেক্ষে আল্লাহ তা’লার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ যে পশু জবেহ করা হয় তাকে আকীকা বলে।

শাফেয়ী মাযহাবের কোন কোন আলেম উল্লেখিত অর্থে আকীকা শব্দের ব্যবহারকে অপছন্দ করেন। তারা মনে করেন, একে আকীকা না বলে নাসীকা বা যাবীহা বলা ভাল। 

আকীকা শব্দের সমার্থক বা সংগতিপূর্ণ অর্থ

ক) আল উদহিয়্যাহ : 

উদহিয়্যাহ বলতে ” কোরবানীর দিবসগুলোতে নির্দ্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্যলাভের উদ্দেশ্যে যা জবেহ করা হয় তাকে বুঝায়।

আকীকা এবং উদহিয়্যাহ উভয়টিই আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবং তার প্রদত্ত নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য করা হয়। তাবে আকীকা দেয়া হয় পিতামাতাকে সন্তান দান আর সন্তানকে জীবনদানের জন্য আল্লাহ তা’আলার কৃতজ্ঞতা এবং তার নৈকট্যলাভের উদ্দেশ্যে। এজন্যে কোন নির্দ্দিষ্ট দিনক্ষণ ধার্য করা নেই। বছরের যখনই সন্তান ভ’মিষ্ট হোক না কেন আকীকা দেয়া যাবে।

কিন্তু উদহিয়্যাহ হচ্ছে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবং বেচে থাকার নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশস্বরূপ কোরবানীর দিবসগুলিতে পশু জবেহ করা। আর কোরবানীর দিনগুলোতেই তা জবেহ করার জন্য নির্দ্দিষ্ট সময়।

খ) আল হাদী :

হজ্জে তামাত্তো বা অনুরূপ কোন কাজ কারার কারণে কোরবানীর দিবসগুলোতে মক্কার হারাম এলাকায় যে পশু জবেহ করা হয় তাকে হাদী বলে।

আকীকা এবং হাদী এই অর্থে সমার্থবোধক যে, দুটোতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি আছে। তবে পার্থক্য হচ্ছে, আকীকার ক্ষেত্রে কোন সময় ও স্থানের বাধ্যবাধকতা নেই কিন্তু হাদীর ক্ষেত্রে সময় ও স্থানের বাধ্য বাধকতা আছে। তা মক্কার হারাম এলাকা এবং কোরবানীর দিবসগুলোতে না হলে হবে না।

আকীকার বিধান/ হুকুম

শাফেয়ী মাযহাব মতে  আর হাম্বলী মাযহাবের বিশুদ্ধ ও প্রশিদ্ধ মতে, আকীকা দেয়া সুন্নাতে মুআক্কাদা। 

হানাফী মাযহাব মতে, সন্তান ভ’মিষ্ট হবার সপ্তম দিনে তার নাম রাখা, মাথা কামানো এবং চুল পরিমান স্বর্ণ দান করার পর আকীকা করা / দেয়া মোবাহ। কেউ কেউ বলেন, আল্লাহ তা’লার নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ আকীকা দেয়া সাওয়াবের কাজ।  

মালেকী মাযহাব মতে, আকীকা দেয়া মানদুব।  আর তাদের দৃষ্টিতে মানদুব সুন্নাতের চেয়ে কিছুটা কম মর্যাদার।

শাফেয়ী এবং হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ আকীকা সুন্নাত হবার ব্যাপারে দলীল হিসেবে অনেকগুলো হাদীস পেশ করেন।  যেমন,  সামুরা বিন জুনদুব (রা) এর বর্ণিত হাদীস। তাতে রাসূল (সা) বলেছেন, 

الغلام مرتهن بعقيقته, يذبح عنه يوم السابع.

”শিশুর যথাযথ বিকাশ হয় না যতক্ষণ না তার আকীকা দেয়া হয়। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিন জবেহ করা হবে।”  অন্য এক বর্ননায় আছে

كل غلام رهينة بعقيقته, تذبح عنه يوم سابعه, ويحلق و يسمى.

” প্রত্যেক শিশুর যথাযথ বিকাশ হয় না যতক্ষণ না তার আকীকা দেয়া হয়। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিন জবেহ করা হবে,তার চুল কামানো হবে এবং তার নাম রাখা হবে।” 

আকীকা শরীয়তের একটি বিধান হবার হিকমাত

আকীকা শরীয়তের একটি পারিবারিক আইন হিসেবে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। কারণ, আকীকার মাধ্যমে আনন্দ প্রকাশ করা হয়, আল্লাহ তা’লার নেয়ামতের প্রকাশ ঘটানো হয়। বংশ পরম্পরা সাব্যস্থ হয়েছে মর্মে মানুষকে জানান দেয়া হয়।

মৃতের পক্ষ থেকে আকীকার হুকুম

সন্তান ভ’মিষ্ট হবার পর ৭ম দিন আসার আগেই যদি মারা যায় তবে তার পক্ষ থেকে আকীকা দিতে হবে কি না সে ব্যাপারে শাফেয়ীদের অভিমত হল, জিবীত থাকার ন্যায় মৃতের পক্ষ থেকেও আকীকা দেয়া মুস্তাহাব। 

আর হাসান আল বাসরী এবং হানাফীদের মতে, মৃতের পক্ষ থেকে আকীকা দেয়া মুস্তাহাব নয়।  

 মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকার বিধান

অধিকাংশ ইসলামী আইনজ্ঞের মতে, ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে যেমনটি আকীকা দেয়া হয়ে থাকে তেমনি মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকেও আকীকা দেয়া শরীয়তের বিধান। কারণ, উম্মে কারয আল খাযাইয়্যাহ থেকে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা) কে আকীকা সম্পর্কে বলতে শুনেছি, 

عن الغلام شاتان مكافئتان, وعن الجارية شاة.

” ছেলে শিশুর পক্ষ থেকে দুইটি স্বাস্থবান ভেড়া/ ছাগল আর মেয়ে শিশুর পক্ষ থেকে একটি ভেড়া/ ছাগল আকীকা হিসেবে জবাই করতে হবে।” 

কার পক্ষ থেকে আকীকা দিতে হবে

শাফেয়ী মাযহাবের আইনজ্ঞদের মতে, ভ’মিষ্ট সন্তানের ভরণ পোষাণের দায়িত্ব যার উপর অর্পিত থাকে তিনি শিশুর পক্ষ থেকে আকীকা দিবেন। তিনি স্বীয় সম্পদ থেকে আকীকা দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। সদ্য ভ’মিষ্ট সন্তানের সম্পদ থেকে আকীকা দিতে পারবেন না। যার উপর ভরণ – পোষণের দায়িত্ব নেই তিনি যদি কোন শিশুর পক্ষ থেকে আকীকা দিতে চান তবে ঐ ব্যক্তির থেকে অনুমতি নিতে হবে যার উপর ভরণ পোষণের দায়িত্ব অর্পিত। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, হযরত হাসান ও হোসাইন (রা) এর বাবা ও মা জীবিত থাকা অবস্থায়  রাসূল (সা) স্বীয় অর্থে তাঁর নাতীদ্বয়ের জন্য আকীকা দিয়েছিলেন বলে প্রমাণিত।  তার এ বিষয়টি  দলিল হিসেবে গ্রহণ করে উল্লেখিত বিধানে  কোন ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। কারণ, হতে পারে রাসূল (সা) তাঁদের পিতা মাতার অনুমতি নিয়ে হাসান ও হোসাইনের জন্য আকীকা দিয়েছিলেন। আবার এও হতে পারে যে,তাদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব ঐ সময় রাসূল (সা) এর উপর অর্পিত ছিল। 

শাফেয়ীদের মতে, যদি কোন সন্তান প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যায় আর তার পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে আকীকা না হয়ে থাকে তবে সে নিজের আকীকা নিজেই দেয়ার ব্যবস্থা করবে। 

তাদের দৃষ্টিতে যিনি আকীকা দিবেন তার কিছু শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে আকীকা দিতে হবে। আর তা হল, তাকে স্বাবলম্বী হতে হবে। স্বাবলম্বী হওয়ার অর্থ হল,  ৬০ দিনের মধ্যে নিজের এবং যার জন্য ভরণ পোষণ বহন করা তার দায়িত্ব তাদের সকলের ভরণ পোষণের পর আকীকা দেয়ার মত অতিরিক্ত সম্পদ থাকা।  যদি ৬০ দিন অতিবহিত হবার পর স্বাবলম্বী হন তবে তার জন্য আকীকা দেয়া সুন্নাত হবে না।  

মালেকী মাযহাবের আইনজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র পিতার উপর আকীকার দায়িত্ব বর্তায়।  

হাম্বলী মাযহাব সুস্পষ্টভাবে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা হল, পিতা আকীকা দিতে অস্বীকার করলে কিংবা মারা গেলে অন্য কেউ আকীকা দিবে অন্যথায় পিতার উপরই আকীকা দেয়ার দায়িত্ব বর্তায়।যদি পিতা ব্যাতিত অন্য কেউ আকীকা দেয় তবে তা মাকরূহ হবে না তবে তাকে আকীকা বলা যাবে না । হযরত হাসান ও হোসাইন (রা) এর পক্ষ থেকে রাসূল (সা) এর আকীকা আদায়ের হিসেব ভিন্ন । কারণ , তিনি মুমিনদের ব্যাপারে তাদের নিজেদের চেয়েও অগ্রাধিকারযোগ্য। 

হাম্বলী মাযহাবের আইনজ্ঞগণ আরো বলেন যে, পিতা যদি স্বচ্ছল নাও হন তবে কর্জ করে তা শোধ করার মত ক্ষমতা থাকলে কর্জ করে আকীকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ইমাম আহমাদ (র) বলেন, যদি সে (পিতা) আকীকা দেয়ার মত সম্পদের অধীকারী না হওয়ার কারণে  ধার করয করে আকীকা দেয় তবে আশা করি আল্লাহ তা’আলা তার সহায়তা করবেন। কারণ তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) এর একটি সুন্নাত  জীবিত করেছেন। 

আকীকা করার সময় 

শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের আইনজ্ঞদের মতে, মায়ের পেট থেকে সন্তান পরিপূর্ণভাবে ভ’মিষ্ট হবার পর থেকে আকীকা দেয়ার সময় আরম্ভ হবে। সম্পূর্ণভাবে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তার পক্ষে আকীকা দেয়া যাবে না । আর দিলেও তা হবে সাধারণ যবেহ। আর হানাফী ও মালেকী মাযহাবের আইনজ্ঞদের মতে, আকীকা দেয়ার সময় হল সন্তানের বয়স যখন সপ্তম দিনে পৌঁছে। ৭ম দিনের আগে আকীকা দিলে তা আদায় হবে না। আকীকা হবে কি হবে না এ ব্যাপারে মতবিরোধ থাকলেও সকল ফকীহ এর ঐক্যমতে সপ্তম দিন আকীকা দেয়া মুস্তাহাব।

জমহুর আলেমের ঐক্যমতে সন্তান যদি রাতে জন্মগ্রহণ করে তবে সে রাত গণণায় আনা হবে না। পরের দিন থেকে হিসেব কওে সপ্তম দিন আকীকা দিতে হবে। আর সন্তান যদি দিনের বেলা জন্মগ্রহণ করে তবে যেদিন জন্মগ্রহণ করেছে ঐদিনকে প্রথম দিন ধরে সপ্তম দিন আকীকা দিতে হবে।   

মালেকী মাযহাবের আইনজ্ঞগণ বলেন, যদি কোন সন্তান ফজরের পর ভ’মিষ্ট হয় তবে ঐ দিনকে গন্য করা যাবে না । অর্থাৎ  ঐদিনকে গণণা না করে পরের দিন থেকে সপ্তম দিন আকীকা দিতে হবে। আর যদি সন্তান ফজরের সময় কিংবা তার পূর্বে জন্মে তবে ঐদিনকে ধরে হিসেব করা হবে।

মালেকীগণ আরো বলেন যে, সপ্তম দিন পার হয়ে গেলে আকীকার সময় শেষ হয়ে যাবে।   

শাফেয়ী মাযহাবের আলেমদের মতে, পিতার পক্ষ থেকে আকীকা দেয়ার সময় সন্তানের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত চলমান  থাকবে।  

হাম্বলী মাযহাবের আইনজ্ঞদের মতে এবং মালেকীদের একটি দুর্বল মতে, যদি সপ্তম দিন আকীকা আদায় করতে না পারে তবে  চত’র্দশ দিন আর যদি তাও দিতে না পারে তবে ২১তম দিনে আকীকা দেয়া সুন্নাত। হযরত আয়শা (রা) থেকে এমনটি বর্ণিত আছে।  

শাফেয়ী মাযহাবের আলেমগণ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, আকীকা দেরী করে দিলেও তার সময় শেষ হয়ে যায় না। তবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত দেরী না করা মুস্তাহাব। এরপরও যদি দেরী করে তবে তখন তা আদায় করার দায়িত্ব আর পিতার উপর থাকবে না বরং তা সন্তানের নিজের দায়িত্বে বর্তাবে।

সে ইচ্ছে করলে নিজের আকীকা নিজে দিবে আর না চাইলে নাও দিতে পারে। আল কাফাল আশ শাশী নিজের আকীকা নিজের দেয়াটা ভাল মনে করেন।  

যা দ্বারা আকীকা দেয়া বৈধ এবং যা দ্বারা মুস্তাহাব

যেসব চতুস্পদ জন্তু দ্বারা কোরবানী করা বৈধ সেসব চতুস্পদ জন্তু দ্বারা আকীকা করা বৈধ। আর তা হল, উট, গরু, ছাগল/ ভেড়া। তা ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা আকীকা বৈধ হবে না। হানাফী, শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের সকল আলেম এবং মালেকীদের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মত হচ্ছে এটি।  মালেকীদের অগ্রাধিকার না পাওয়া মত অনুযায়ী ছাগল বা ভেড়া ব্যতিত আকীকা দেয়া যাবে না। 

শাফেয়ী মাযহাবের আইনজ্ঞদের মতে, পরিমান ও বয়সের ক্ষেত্রে তাই প্রযোজ্য হবে  যা কোরবানীর পশুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। তাই ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে পূর্ণ ছাগল বা ভেড়া দ্বারা আর উট ও গরুর ক্ষেত্রে এক সপ্তমাংশ দ্বারা আকীকা দেয়া যাবে।

মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের আলেমদের মতে উট ও গরু দ্বারা আকীকা দিলে পূর্ণ একটি উট বা গরু দিতে হবে। অংশ বিশেষ দ্বারা হবে না। 

শাফেয়ী এবং হাম্বলী মাযহাবের আলেমদের মতে,  ছেলে শিশুর জন্য ২টি স্বাস্থবান ছাগল/ ভেড়া এবং মেয়ে শিশুর জন্য একটি ছাগল / ভেড়া আকীকা দেয়া মুস্তাহাব। কারণ, হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) তাদেরকে ছেলের জন্য দুটি এবং মেয়ের জন্য একটি স্বাস্থবান ছাগল আকীকা দেয়ার জন্য নির্দেশ করেছেন।  

আর ছেলে শিশুর পক্ষ থেকে একটি ছাগল আকীকা দিলে তা আদায় হবে। কারণ হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে দখা যায় যে, রাসূল (সা) হাসান এবং হোসাইন (রা) এর প্রত্যেকের জন্য একটি করে খাশি আকীকা দিয়েছেলেন। 

 হানাফী ও মালেকী মাযহাবের আইনজ্ঞদের মতে,  সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক প্রত্যেকের পক্ষ থেকে একটি ছাগল আকীকা দিতে হবে। হযরত ইবনে ওমার এমনটি করেছেন বলে প্রমাণিত। হযরত হাসান ও কাতাদা (রা) বলেন যে, মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা দেবার প্রয়োজন নাই।    

জমহুর ওলামা এ ব্যপারে একমত হয়েছেন যে, সাধারণত পশু জবাই করার ক্ষেত্রে যে সব শর্তাবলী প্রযোজ্য আকীকার ক্ষেত্রেও সেসব শর্তাবলী প্রযোজ্য। তবে ” আল্লাহুম্মা লাকা ওয়া ইলাইকা হাজিহি আকীকাতু ফুলান (ফুলানের স্থলে যার পক্ষ থেকে আকীকা দেয়া হবে তার নাম ) বলা মুস্তাহাব।   

আর উল্লেখিত দোআটি বলা মুস্তাহাব এ জন্যে যে, হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) হাসান ও হোসাইনের পক্ষ থেকে আকীকা দেয়ার সময় বলেছেন যে, ” তোমরা বল, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা লাকা ওয়া ইলাইকা, হাজিহি আকীকাতু ফুলান”।  

আকীকার গোশত রান্না করার বিধান

অধিকাংশ ইসলামী আইনজ্ঞের মতে, আকীকার গোশত সদকা না দিয়ে রান্না করা মুস্তাহাব। হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন,

 السنة شاتان مكافئتان عن الغلام وعن الجاريتان شاة, تطبخ جدولا ولا يكسر عظما, ويأكل و يطعم و يتصدق وذلك يوم السابع.

” সুন্নাত হচ্ছে, সন্তান জন্মের সপ্তম দিন ছেলে শিশুর পক্ষ থেকে দুইটি আর মেয়ে শিশুর পক্ষ থেকে একটি স্বাস্থবান ছাগল জবেহ করা, তার হাড্ডি ফেলে না দিয়ে ভালভাবে রান্না করা, তারপর তা নিজেরা ভক্ষণ করা, অন্যদের খাওয়ানো, প্রতিবেশীদের হাদীয়া দেয়া”।  

হানাফী মাযহাবের আলেমদের মতে, আকীকার গোশত কিছু পাক করা আর কিছু পাক না করে তা হাদীয়া দেয়া বৈধ।  

ফকীহগণ আকীকা সম্পর্কে আলোচনা করার সময় সন্তানের নাম রাখা, তার মাথা মুন্ডানো, কানে কি বলা হবে তা, তাহনীক করা, মুসলমানী করানো ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কথা বলেছেন। সংশ্লিষ্ট পরিভাষার অধীনে তার বিস্তারিত আলোচনা হবে। 

মোঃ নূরুল্লাহ

প্রভাষক, বিএমটিটিআই, গাজীপুর

nibrasbd