Establishment
২০০৩ সালের সম্ভবত এপ্রিল মাস। মাদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জনাব তারিক মো. নাছরুল্লাহ মক্কায় এসেছেন পবিত্র ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে। ঘটনাচক্রে রিয়াদে অবস্থিত আল ইমাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জনাব বায়েজীদ হোসাইনও একই উদ্দেশ্যে মক্কায় এসেছেন। জনাব মুহাম্মদ মু’তাছিম বিল্লাহ মক্কার উম্মুল ক্বোরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দেশে অবস্থানকালেই তিনজন খুবই কাছের বন্ধু। তিন বন্ধুর মিলন পবিত্র কাবা চত্ত্বরে। অনেক কথা অনেক গল্প। জনাব নাছরুল্লাহর প্রস্তাব- আমরা দেশের জন্যতো কিছু করতে পারি। মানুষের জন্য কিছু করার উদ্যোগ নিতে পারি। তিনজনই একমত ও একাট্টা। এবার জুলাই মাসে ছুটিতে দেশে গিয়ে বিষয়টি আমাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবো। পবিত্র কাবা চত্ত্বরে বসেই মহান রবের সাহায্য প্রার্থনা করলেন তিনজন। ওমরাহ পালন শেষে জনাব নাছরুল্লাহ ও জনাব বায়েজীদ নিজ নিজ গন্তব্যে প্রত্যাবর্তন করলেন।
এর কিছু দিন পর জনাব নাছরুল্লাহ পুনরায় মক্কায় এলে জনাব মু’তাছিম বিল্লাহর রুমে বসে ২ জনে গভীর রাত পর্যন্ত ৭৩ জনের তালিকা তৈরী করলেন। দেশে অবস্থান করে এবং আমাদের পছন্দের একজন সিনিয়র ভাইকে আমাদের প্রয়োজন। যাকে আমরা আমাদের সাথে পাবো। আমাদের পরিচালনার দায়িত্বও যিনি নিতে পারবেন। সেই ভাই কে হতে পারেন? অনেক খোঁজাখুজি করে যাকে বের করলেন, তিনি হলেন জনাব মোঃ নূরুল্লাহ ভাই। তিনজনই একমত হলেন। নূরুল্লাহ ভাইকেই সিলেকশন দেয়া যায়। ৭৩ জনের প্রাথমিক তালিকা থেকে তারা প্রথম পছন্দের সাতজন ভাইয়ের নাম চূড়ান্ত করলেন। তারা হলেন –
১. জনাব মোঃ নূরুল্লাহ
২. জনাব মুহাম্মদ মু’তাছিম বিল্লাহ
৩. জনাব তারিক মোঃ নাছরুল্লাহ
৪. জনাব বায়েজীদ হোসাইন
৫. জনাব মাযহারুল ইসলাম
৬. জনাব মোঃ ওয়ালী উল্লাহ খান এবং
৭. জনাব মোঃ নূরুল্লাহ তা’রীফ
জুলাই মাস-২০০৩। সৌদি আরবে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী দেশে এসে পৌছেছে।পূর্বের পরিকল্পনা মাফিক অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় বাছাইকৃত এই সাতজন মিলে একটি প্রাথমিক সভা করা হবে। আর তা হবে জনাব নূরুল্লাহ ভাইয়ের বাসায়। সাতজন গাজীপুরে বিএমটিটিআই সংলগ্ন জনাব মোঃ নূরুল্লাহ ভাইয়ের বাসায় সকলে মিলিত হন। জনাব মু’তাছিম বিল্লাহ ও জনাব তারিক মোঃ নাছরুল্লাহ কাবা চত্ত্বরের স্বপ্নের বিষয় তুলে ধরেন। একটি ডায়েরীতে সভার আলোচ্যসূচী ও উপস্থিতির স্বাক্ষর নেয়া হয়। সেদিন জনাব নূরুল্লাহর একটি বক্তব্য ছিলো যে, সত্যি সত্যি আজ যারা বিদেশে অধ্যয়ন করছেন তারা যদি বড় বড় চাকুরীর অফার পরিহার করতে পারেন, খিদমাতের মানসিকতা থাকে তবেই তিনি দায়িত্ব নিতে রাজি। আর যদি যার যার মত স্বপ্ন দ্রষ্টাগণ এদিক সেদিক চলে যান তবে কোন প্রতিষ্ঠান গঠন করার প্রয়োজন নেই। সকলে তার কথায় সাঁয় দেন। একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়। এ সভায়ই জনাব নূরুল্লাহ ও জনাব ওয়ালী উল্লাহর নামে যৌথ একাউন্স খোলার সিদ্ধান্ত হয়। এ বৈঠকটিই ছিলো নিবরাস গঠনের জন্য মাইলফলক।
সিদ্ধান্ত হয়, সাতজন নয়। এর সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। যাদের সদস্য করা হবে তারা হবেন সাদা দিলের মানুষ। হবেন নির্লোভ ও নিঃস্বার্থ মানসিকতার। প্রতি বছর ২৫০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা হারে চার বছরে এক লাখ করে টাকা জমা দিবেন কিন্তু এ টাকার জন্য লাভ করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। সেবাই হবে মূল লক্ষ্য। একটি গঠনতন্ত্র/নীতিমালা তৈরির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যারা কাজটির আঞ্জাম দিবেন তারা হলেন-
১. জনাব মুহাম্মদ মু’তাছিম বিল্লাহ
২. জনাব তারিক মোঃ নাছরুল্লাহ
৩. জনাব মাযহারুল ইসলাম।
আরো কিছু ভাইকে সদস্য হিসেবে খুঁজে বের করার জন্য জনাব মুতাছিম বিল্লাহ ও জনাব তারিক মো. নাছরুল্লাহকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে ভাইয়েরা।
এরই মধ্যে অতিবাহিত হয় একটি বছর। বাছাইকৃত সাদা মনের বেশ কিছু ভাইকে দাওয়াত দেয়া হয় আমাদের মিশনে। ৯ জুলাই ২০০৪ তারিখে এক্সিকিউটিভ কমিটির (ইসি) ১ম সভা করার সিদ্ধান্ত হয় মগবাজারের আল-হিকমাহ অফিসে। সেখানে উল্লিখিত সাতজন ছাড়াও যাদের উপস্থিত করা হয় তা হলেন-
১. জনাব আব্দুর রহমান
২. জনাব মু. আখতার হোসাইন
৩. জনাব মোঃ জাফরুল্লাহ
৪. জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান খান
৫. জনাব হোসাইন আল মামুন
৬. জনাব মোঃ তৌহিদুল ইসলাম
এ সভায় মোট ১৩ জন ভাই উপস্থিত ছিলেন।
এ বৈঠকটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একদিকে এটি ছিলো বন্ধুদের মিলনমেলা অন্যদিকে সকলে মিলে কিছু একটা করার আগ্রহ। গোটা পরিবেশটা ছিলো আনন্দঘন। সিদ্ধান্ত হলো- ফাউন্ডেশনের একটি নাম ঠিক করতে হবে। বিস্তারিত আলোচনা। কেউ বললেন, আল ইখওয়ান, কেউ বললেন তাহসিন, কেউ বললেন রেনেসাঁ, কেউ বললেন মানহাল, কেউ বললেন, মা-আব, একজন বললেন, নিবরাস। নিবরাস নাম শুনার পর কিছুটা অপরিচিত মনে হলেও সবশেষ সিদ্ধান্ত এ প্রতিষ্ঠানের নাম হবে ‘নিবরাস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’। নিবরাস মানে আলোর বিচ্ছুরণ। অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। মশাল বা স্পার্ক। ব্যাখ্যা শুনে যারা অর্থ বুঝেননি তাদেরও পছন্দ হলো নামটি।
১২ আগষ্ট ২০০৪ তারিখে ইসির ২য় সভায় আলোচনা হলো এর গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে। সকলের মত। এ প্রতিষ্ঠানের কোনো চেয়ারম্যান থাকবে না। জাতিসংঘ, ওআইসি এবং রাবেতার মত এর মূল পদবী হবে সেক্রেটারী জেনারেল। আর যদি কখনও চেয়ারম্যান করা হয় তবে তা হবে অনারারী। তা হতে পারে কাবার ইমামের মত বিশ্ববিখ্যাত কেউ। নির্ধারিত নামে একটি রেজিষ্ট্রেশন নেয়ার জন্য জনাব মোঃ মোস্তাফীজুর রহমান খানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ সভাতেই সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে পরবর্তী ২ বছর মেয়াদের জন্য সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হন জনাব মোঃ নূরুল্ল¬াহ আল মাদানী ও ফিনান্স সেক্রেটারী মনোনীত হন জনাব ওয়ালী উল্লাহ খান। পরবর্তী বছর ২৪ জুন ২০০৫ তারিখে অনুষ্ঠিত এক্সিকিউটিভ কমিটির ৩য় সভায় নিরূপ পূর্ণাঙ্গ এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়।
সেক্রেটারী জেনারেল জনাব মোঃ নূরুল্লাহ আল-মাদানী
এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল জনাব মোঃ আব্দুর রহমান
জনাব মুহাম্মদ মু’তাছিম বিল্লাহ
ফিন্যান্স সেক্রেটারী জনাব মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ খান
এডুকেশন সেক্রেটারী জনাব মোঃ আখতার হোসাইন
ফরেন সেক্রেটারী জনাব তারিক মো: নাছরুল্লাহ
সোস্যাল ওয়েলফেয়ার সেক্রেটারী জনাব মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান, ইবি
সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেক্রেটারী জনাব মোহাঃ মোস্তাফীজুর রহমান খান
অফিস এন্ড প্রেস সেক্রেটারী জনাব মোঃ তৌহিদুল ইসলাম
বিভিন্ন সভায় মিলিত হয়ে চলতে থাকে নিবরাস ফাউন্ডেশন গুছানোর কর্যক্রম। ইতোমধ্যে যাত্রাবাড়ীর মিরহাজিরবাগের আলহেরা ছাত্রাবাসের জনাব মোঃ মোস্তাফীজুর রহমান খানের আবাসিক কক্ষকে কেন্দ্র করে তার পাশের একটি কক্ষ অফিস হিসেবে ভাড়া নেয়া হয়।
২০০৫ সাল। আলোচনা হয় ফউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি হবে আধুনিক মানসম্পন্ন। নৈতিকতাতো থাকতেই হবে। প্রস্তাব হয় মালয়েশিয়ার আদলে একটি প্রতিষ্ঠান করার। বিস্তারিত আলোচনা শেষে ২০০৭ সাল থেকেই এর কার্যক্রম আরম্ভ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। নাম দেয়া হয় “নিবরাস ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসা”।
৫ আগষ্ট ২০০৬ তারিখ এক্সিকিউটিভ কমিটির ১২ তম সভায় প্রস্তাব হয় যে, নিবরাস ফাউন্ডেশনের জন্য একজন মুরুব্বী থাকা প্রয়োজন। যিনি বিভিন্ন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে নিবরাসকে পরামর্শ ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে পারবেন। অনেকের নাম প্রস্তাবনায় আসে। সর্বশেষ আমাদের সকলের উস্তায অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন এর নিকট পরামর্শ চাইলে তিনি জনাব মোহাম্মদ আলী চৌধরীর নাম প্রস্তাব করেন। আমরা সকলে একমত হয়ে এক্সিকিউটিভ কমিটির অধিকাংশ সদস্যদের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানের প্রস্তাবনা নিয়ে আমরা জনাব মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর অফিসে যাই। তাকে নিবরাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পদ প্রস্তাব করলে তিনি বলেন, ভাইজান যদি এ প্রতিষ্ঠানের সাথে থাকে তবেই আমি রাজি। তখন আমরা ২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ তারিখের সভায় অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীনকে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জনাব মোহাম্মদ আলী চৌধুরীকে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করি।
২০০৭ সালের টার্গেট নিয়ে ২০০৬ এর শেষ দিকে বনশ্রীতে নিবরাস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শুরু হয় নিবরাস ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার কার্যক্রম। মাদরাসাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় আরো অনেক দিক ও বিভাগের কর্ম তৎপরতা। বিভিন্ন রকম সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চলছে নিবরাস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। এর সকল কার্যক্রম আরো দ্রুত গতিতে প্রস্ফুটিত হোক- মহান রবের দরবারে সেই প্রার্থনা।